আদর্শ হিন্দু হোটেল (ফ্রেশ কপি) pdf
আদর্শ হিন্দু হোটেল বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা অন্যতম সেরা উপন্যাস। উপন্যাসটি শুরু করার আগে আমি বলবো বর্তমান সময়ের সাথে তুলনা না করে চিন্তাধারাকে কয়েক বছর পিছিয়ে পড়া শুরু করতে, একে মন্দ লাগবে না বৈকি। বরং এতেই লেখকের লেখনী ও পাঠকের সাহিত্য পিপাসা সার্থক হবে।
চরিত্র বিশ্লেষণঃ
উপন্যাসের মূল চরিত্রে রয়েছে “হাজারি ঠাকুর”। বউ ও মেয়েকে গ্রামে রেখে সে রানাঘাটের বেচু চকোত্তির হোটেলে চাকরী করে রসুইয়ে বামনের(রাধুনীর) কিন্তু স্বপ্ন তার আকাশ ছোয়া। সে চায় নিজের হোটেল খুলতে। সূদুর কোলকাতা থেকে তার রান্নার সুনাম শুনে খেতে চলে আসে বড় বাবুরা।
তারপরের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রটিই “পদ্ম ঝি” এর। বেচু চকোত্তির ডান হাত বলা যায় তাকে। কোন এক অজানা কারনে তার কথা ফেলতে পারেনা চকোত্তি মশায়। গল্পের শেষের দিকে তা স্পষ্ট করেছেন লেখক।
“কুসুম” হচ্ছে হাজারী ঠাকুরের গায়ের মেয়ে। হাজারীকে সে বাবার আসনে স্থান দিয়েছে। হাজারীও তাকে খুব পছন্দ করে৷ হোটেলের রাধা খাবার মাঝে মাঝে নিজে না খেয়ে কুসুমের জন্য নিয়ে যায় হাজারী৷
গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি চরিত্রে রয়েছে অতসী নামক গায়ের সাহেবের মেয়ে৷ দেবীর মতো নরম মনের মেয়েটি হাজারী ঠাকুরের রান্নার ভক্ত। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছে বংশি, নরেন, হাজারির মেয়ে টেপি।
আদর্শ হিন্দু হোটেল এর চিত্রপটঃ
রানাঘাটের বেচু চকোত্তির হোটেলে রসুইয়ে বামনের চাকরি করে “হাজারী ঠাকুর”, তার রান্নার প্রশংসায় কাস্টমার পঞ্চমুখ থাকলেও বেচু চকোত্তি আর পদ্ম ঝি তাকে সবসময় তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেই চলে। বিশেষত তার এই সুনাম যে সূদুর কলকাতা অব্দি চলে গেছে এইটে সহ্য হয়না পদ্ম ঝিয়ের। সে সব সময় নিচু চোখেই দেখে হাজারীকে। হাজারির পরিবারের সবাই গ্রামে থাকে সে হোটেলেই রাধে হোটেলেই খায়, কিন্তু এই রানাঘাটে আছে তার এক পাতানো মেয়ে কুসুম, যে দই আর দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়। হোটেলে ভালো ভালো খাবার রান্না হলে হাজারী ঠাকুর নিজে না খেয়ে মেয়ের জন্য নিয়ে যায়। এটা পদ্ম ঝির সহ্য হয় না,কারন সে সবসময় বেচে যাওয়া খাবারটুকু নিজেই সাবারের লোভে থাকে। হাজারীর স্বপ্ন তার নিজের একটা হোটেল থাকবে, উপরে বড় বড় করে লেখা থাকবে,
হাজারীর হিন্দু হোটেল
কিন্তু ৭ বছরের কর্মস্থলের মায়া কাটিয়ে উঠতে পারেনা হাজারী ঠাকুর। আবার অনেক টাকা পয়সারও প্রয়োজন কোথায় পাবে সে এত টাকা? হোটেলে থেকে রান্নার কাজ টা তো সে ভালোই পারে, সেই সঙ্গে বাজার করার নিয়ম কানুনও ভালোই রপ্ত করে নিয়েছে। এসব ভাবতে থাকে সে নদীর পাড়ে বসে আপন মনে গোধুলী লগ্নে। কিন্তু তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়নি একসময় অতসী, কুসুমের থেকে টাকা ধার করে নিজেই খুলে ফেলে চমৎকার একটি হিন্দু হোটেল। তার হোটেল খোলার পর যদু বাড়ুয্যে কিংবা বেচু চকোত্তি কারো হোটেলই টিকতে পারেনা প্রতিযোগিতা করে৷ এভাবেই এই গল্পে বিভূতিভূষণ দেখিয়েছে সৎ থেকেও ব্যাবসা করে উন্নতি লাভের এক অপরূপ গল্পকথা।
মতামতঃ
শুরুতেই বলেছি সময়ের ছাচে,নয় সাহিত্যের মাপকাঠিতে ফেলে পড়তে হবে এই আদর্শ হিন্দু হোটেল উপন্যাসটি। বিভূতিভূষণের চমৎকার গল্পগাথাই পাঠককে বই শেষ না করে উঠতেই দেবে না। এই বইটিকে কেউ মোটিভেশনাল ক্যাটাগরিতে ফেললেও আমি অবাক হবোনা।
Nice
ReplyDelete